Read more
খেরওয়াড় সংস্কৃতি ও মহেঞ্জোদারো সভ্যতা
মহেঞ্জোদারো এবং হরপ্পা যথাক্রমে পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশে এবং পাঞ্জাব প্রদেশে অবস্থিত। ওই দুটোই ছিল সিন্ধু সভ্যতার বড় নগর সভ্যতা। তাছাড়া সিন্ধু সভ্যতার আরো বহু নিদর্শন ছড়িয়ে আছে ভারতে অবস্থিত গুজরাটের লোথালে এবং রাজস্থানের কালিবোঙানে।
এবার টইনবি সাহেব কি বলতে চেয়েছেন সেটাই তুলে ধরছি— Sir John Marshall takes the view that the "Indus Culture" is no more closely related to the Sumeric Culture than it is to the Egyptiac or Minoan World. At the same time he takes the view that these four cultures have a special relation within one another which they do not share within other representatives of the class, that they constitute, infact, a sub-species within their species. Behind all four of them he discerns a common parent of around all four common social environment in the culture of the "Chalcolithic "phase of material technique of which was already diffused, at the simultaneous down of these four civilizations, over the whole region, extending from the south-eastern face of the Atlas to the south western face of the Himalayans which has since dried up (expect for the valleys of the four great rivers) in the Afrasian stepps. In fact Sir John Marshall almost goes so far as to vegard this common "Chalcolithic" culture as a unity of which "Indus Culture" and the Sumeric and the Egyptiac another Minoan are mere articulation".
স্যার জন মার্শাল অনুমান করেছেন যে, সিন্ধু সংস্কৃতির সাথে সুমেরীয় সংস্কৃতির এতটাই সাদৃশ্য আছে যতটা মিশরের সাথে মিনোয়ান সংস্কৃতির সাদৃশ্য বর্তমান। কিন্তু তার সাথে সাথে তিনি এটাও অনুমান করেছিলেন যে এই চারটি সংস্কৃতির মধ্যেও আলাদা একটা সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। আর ওই সংস্কৃতির একটি বৈশিষ্ট্যের মধ্যে অন্য আর একটি উপাদান বর্তমান। তবে তিনি ভেবেছিলেন যে এই চারটি সভ্যতা ঘিরে একই রকমের অস্ত্রের ব্যবহার যা কিনা ক্যালকোলিথিক প্রস্তর যুগের সভ্যতা গড়ে উঠেছিল এবং পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছিল। আর ওই সব ( ৮০ )
জায়গাগুলো আটলাস পর্বতের দক্ষিণ-পশ্চিম উপত্যকা থেকে শুরু করে হিমালয় পর্বতের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। হিমালয়ের দক্ষিণ-পশ্চিম উপত্যকা হয়ে গেছে (কেবলমাত্র চারটি নদীর তীরবর্তী অঞ্চল ছাড়া) এগুলিই আফ্রো-এশিয়ার বিস্তীর্ণ উর্বর এবং সমতল অঞ্চল। সত্যি কথা বলতে গেলে, স্যার জন মর্শাল এতটাই আগ বাড়িয়ে বলেছেন যে ওই চারটি সভ্যতা—সিন্ধু, সুমেরু, মিশরীয়, মিনোওয়ান এককালে একই ছিল এবং একটা বৃহৎ অঞ্চ লে পরিব্যাপ্ত ছিল। সবগুলোতেই ক্যালকোলিথিক যুগের দৃশ্যরূপ নিদর্শন ছিল।
স্যার জন মার্শালের দেওয়া তথ্যে চারটি সভ্যতা যে একই ছিল তার কিছুটা আঁচ পাওয়া যায় আমাদের বহুল প্রচলিত গাথা থেকে
হিহিড়ি পিপিড়িরে বোন জানাম লেনা,
হারাদাতারে বোন হারালেনা
সাসাং বেডারে বোন জীত এনা,
খজ খামানরে বোন খজেনা হো।
হিহিড়ি পিপিড়ি শব্দে বিশেষ কোন জায়গার সন্ধান পাওয়া না গেলেও হারাদাতা কথা থেকে আমরা বিশেষ স্থানের বিবরণ পাই। তবুও হিহিড়ি শব্দের বিশ্লেষণের চেষ্টা করা হয়েছে। ডালটন সাহেব শব্দটা ‘হির’শব্দের সাথে তুলনা করেছেন এবং ‘হির’ শব্দের ইংরেজী অনুবাদ করেছেন 'Origin' বলে। তাঁর মতে হিহিড়ি শব্দের অর্থ করেছেন land of Butterflies' এবং জায়গাটা একটা সুন্দর বাগিচার মতো বলে মন্তব্য করেছেন। বলতে গেলে ফলে-ফুলে ভরা একটা সুবিন্যস্ত জায়গা। সাধারণত প্রজাপতি ওইরকম জায়গাতেই উড়ে উড়ে বেড়ায়। ভাবতে আশ্চর্য লাগে জায়গার বর্ণনার সাথে ‘ইডেন গার্ডেনের’ বর্ণনার অনেক সাদৃশ্য আছে আর ওখানেই নাকি আদম এবং ইভ্-এর বাসস্থান ছিল। আবার হিহিড়ি কথার সাথে হিড়িঞ (ভুলে যাওয়া) শব্দের খানিকটা মিল আছে এবং যার অর্থ দাঁড়ায়—forgotten land. আবার এদিকে ডালটন্ হিহিড়ি কথার সাথে হাজারিবাগের আহিরি পরগণার সঙ্গে সম্বন্ধ টেনেছেন। আহিরি শব্দের আর একটা অর্থ যেটা পরে পশ্চাতে আলোচনা করা যাবে। যা হোক, হারাদাতা শব্দ থেকে স্থানের বিবরণ অনেক জায়গাতেই পাওয়া গেছে। হারাদাতা কথা থেকে অনুমিত হয় যে হারাদাতার ভৌগোলিক অবস্থান পর্বতের সংলগ্ন অঞ্চ লেই ছিল। আবার ‘দা’ কথায় বোঝা যায়, জায়গাটা পাহাড়ী ঝর্ণার জায়গাই ছিল। হারাদাতা শব্দ থেকে শুধু যে জায়গার অবস্থানই অনুমিত হচ্ছে এমন নয়, মানুষের বসতি সেকালে ওইরকম জায়গাতেই ছিল সেটাও সূচিত হচ্ছে। এই হারাদাতা যুগের মানুষ যখন অস্ত্রের ব্যবহার শিখল তখন অন্যান্য জীবজন্তুদের সাথে মানুষের পার্থক্য
এনে দিল। এরা শুধু মানুষ নামধারীই হল না, এদেব বংশবৃদ্ধি ঘটল। অনেকটা উন্নততর জীবে পরিণত হল যেটাকে পুরাতাত্ত্বিকরা Population explosion বলে থাকেন। সাঁওতালীতে ‘হারা’ শব্দের দুটো অর্থ হয়—এক ‘হারার' অর্থ পাহাড়, অন্য আর এক অর্থ বৃদ্ধি প্রাপ্ত হওয়া কিংবা to grow । গানে 'হারাদাতারে বোন হরালেন' কথার অর্থ হচ্ছে—ওই জায়গাতেই আমাদের বংশবৃদ্ধি ঘটেছিল এবং মানব সমাজ জীবন স্তরে উত্তীর্ণ হয়েছিলাম।
এই প্রসঙ্গে নৃবিজ্ঞানীরা কে কী ভাবছেন এবং তাঁদের উদ্ধৃতি দেওয়ার চেষ্টা করছি। প্রথমে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞানী 'John Coles '-এর সম্পাদিত পুস্তক থেকে উদ্ধৃতি দিচ্ছি— "Caxton History of the World published by New Caxton Literary Service, Vol. 1-The Creature we call man, because he made tools first appeared in Africa during the early part of the Geological epoch called the pleistocene or Great Ice Age. For many thousand of years they existed side by side with animals which although similar in appearance lucked this vitally important skill with tools made he could begin to control his environment and his fellow creatures. The most primitive stone age, roughly chipped from a pelible enabled him together found more easily by killing or by collecting. From this African homeland the tool makers moved slowly into Europe and Southern Asia. In successive migrations which were virtually completed 2,50,000 years ago, he penetrated much of the old world that was not covered by the periodic advances of great ice-sheets from the high lands to the north. "
প্রাণী জগতের মধ্যে যারা অস্ত্র তৈরীর কৌশল আয়ত্ত্ব করতে পেরেছিল তাদেরকে মানুষ বলে অভিহিত করা হয়েছিল এবং বিস্তীর্ণ বরফ যুগে আফ্রিকা দেশেই মনুষ্য প্রজাতির দেখা মিলেছিল। মানুষ জন্তু-জানোয়ারের সাথে বহুকাল সহাবস্থান করেছিল। তখনও তারা কিন্তু অস্ত্রের ব্যবহার রপ্ত করেনি। মানুষ যখনই অস্ত্রের ব্যবহার শিখল ঠিক তখনই অন্য প্রাণীদের থেকে আলাদা হয়ে গেল এবং জীবজগতে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে আরম্ভ করল। এবড়ো খেবড়ো এবং ভোঁতা অস্ত্র দিয়েই প্রাণী সংহার করতে আরম্ভ করল এবং অন্যান্য সম্পদও আহরণ করতে শিখল। যাঁরা অস্ত্র তৈরীর কৌশল আয়ত্ত্ব করতে পেরেছিল তাঁরা তাঁদের জন্মভূমি আফ্রিকা থেকে একের পর এক দলে দলে ইউরোপ এবং দক্ষিণ এশিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছিল এবং মোটামুটি আড়াই লক্ষ বছর পূর্বেই মানুষ আফ্রিকা থেকে পৃথিবীর ওইসব অঞ্চ লে বসতি স্থাপন করেছিল। বিশেষ করে ইউরোপের বেশির ভাগ অঞ্চ লে তারা প্রবেশ করেছিল যেখানে বেশির ভাগ সময় উত্তরাঞ্চলের উঁচু জায়গা থেকে বরফের চাঁই ভেসে আসতে পারছিল না।
মহেঞ্জোদারোর সভ্যতার কথা বলতে গিয়ে আমাকে অন্যান্য বিষয়ের অনেক কিছুর অবতারণা করতে হয়েছে কেননা মহেঞ্জোদারো এবং খেরওয়াড় সংস্কৃতির এক অবিমিশ্র তত্ত্ব বা theory or philosophy দাঁড় করানোর প্রয়াস করেছি। আমার তত্ত্ব এবং তথ্যের মূল প্রয়াস – পৃথিবীতে মানুষের উদ্ভব এবং বিকাশ স্থান এবং একইভাবে আমাদের প্রচলিত লোকগাথাতেও কথিত আছে যে মানুষের উদ্ভব ঘটেছিল একই স্থান থেকে তারা এখন আফ্রিকাবাসী হতে পারে কিংবা হতে পারে এশিয়াবাসী। নৃবিজ্ঞানেও একই মত পোষণ করা হয়েছে। সত্য সন্ধানী হলে বুঝতে কষ্ট হয় না যে সাসাংবেড়া (সিন্ধু অঞ্চ ল) সভ্যতা, মিশরীয় সভ্যতা, মিনোওয়ান সভ্যতা একই সময়ে একইভাবে গড়ে উঠেছিল।
অতএব মানুষ মাত্রেই পিলচু বুড়া এবং পিলচু বুড়ির বংশধর। ভূ-বিজ্ঞানীর মতে তাদের জন্ম হিহিড়ি অর্থাৎ আফ্রিকার ফলে-ফুলে বাগিচায় হতে পারে।
এখানে পুরাতাত্ত্বিকদের মতামত উল্লেখ করার লোভ সম্বরণ করতে পারছি না। তবে তার আগে মান মণ্ডল হেমব্রম যখন N. K. Verma-র সাথে সাক্ষাৎ করতে গিয়েছিলেন সেই সময় মাননীয় উচিৎ কারাম গুরুর সহায়তায় সাঁওতাল পরগণার অনেক গান টেপ করে রাখা হয়। টেপ করা একটা লাঁগড়ে গান থেকে বুঝতে পারা যায় খেরওয়াড় জীবন দর্শন কতটা উন্নতমানের ছিল—
হায় ভগবান গো,
হেনদা ভগবান গো মানুষ মানুষ বধি।’
এখানে গান রচয়িতা মানুষ মানুষকে সংহার করার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন। Man's Ancestors by Ronald Schiller, Reader's Digest Marvels and Mysteries of the World Around his 2nd printing 1972, P. 42. The phenomenal discoveries made recently in East Africa have sent violent shock words through the anthropological world for they challenge
the validity of long cherished theories concerning the origin and evolution of man. Page-1 probably the primitive fool marks began by picking up hand-signed pieces of early-to-fracture-rock such as flint, quarlay and chart from a stream liege. Choosing stops already worn by the water to resemble ax heads."
পাহাড় থেকে বয়ে আসা জলের ধারা যে জায়গায় পড়ছে সেটাই হারাদাতা। আর এই হারাদাতার যুগেই মানুষ মারাঙ বুরুকে পেয়েছিল। আমাদের লোক-ইতিহাস থেকে জানা যায় যে মারাঙ বুরুই মানুষদের নানান্ কৃৎ কৌশলের সন্ধান দিয়েছিল। বিশেষ করে প্রস্তর যুগে মানুষ নানান্ কৌশল রপ্ত করেছিল।
১। বিভিন্ন চাষ-আবাদ (agriculture),
২। বাগান চাষ (horticulture),
৩। পশুপালন (domestication of animals),
৪। লাঙ্গলের ব্যবহার (use of plough),
৫। পশুদের দিয়ে লাঙ্গল টানা (use of animal power),
৬। হাঁড়ি কলসি তৈরী (pottery),
৭। বাণিজ্য এবং মাল আদান-প্রদান (trade and exchange),
৮। হাঁড়িয়া এবং মদ তৈরী (fomentation),
৯। সুতা তৈরী এবং বস্ত্র বুনন (spinning and weaving)।
মানুষ এগুলো সবই শিখেছিল মারাঙ বুরুর কাছ থেকে। বিপুল সংখ্যায় মানুষের বংশবৃদ্ধি ঘটেছিল আর এসব কথা এখনকার নৃ-বিজ্ঞানীরা দ্বিতীয়বার লিপিবদ্ধ করছেন— The people of Asia by Gordon T. Bowles Weidenfeld and Nicolson, 1977. pp. 67. "For a millennium or more after the start of this first population explosion Western and Inner Asia remained the most favoured quarters because they were the homeland regions of so many of the ancestral wild forms of the most important cultivated plants and animals. By the end of this period, the Nile Valley and the adjacent a physician highlands had developed a comparable neolithic nexus and similar developments can be traced in the Indus Valley, the Yellow River basin and in at least one if not two river basins of the south east Asia, not to mention that of the Danube in Europe."
(মূল সাঁওতালী থেকে বাংলা ভাষান্তর—মণ্ডল হেমব্রম).
[Mortimer Wheeler দীর্ঘদিন ধরে সিন্ধু সভ্যতার খনন কার্য পরিচালনা করেছিলেন। তিনিও হরপ্পা সভ্যতার সঙ্গে জীবন্ত হো, মুণ্ডাদের অনেক সাংস্কৃতিক সাদৃশ্য খুঁজে পেয়েছিলেন - "But in considering the generality of Indian Megaliths it is well with Prof. Fiver Haimendorf to separate features which usefully distinguish the ancient megalithic monuments now under study from the partially assemblages which have survived amidst living tribal cultures of unknown antiquity further north east. A primary differential lies in the question of usage. For example the megaliths of the tribal folks of today are commonly memories unconnected with graves or braining grounds, whilst those of prehistoric times are in the main graves, appropriately the distinction port hole opening which we have described as a characteristic of most of the ancient megalithic costs of southern India does not occur amongst any of the tribes of middle India who burg their dead in megalithic graves such as the Munda and Hos." [My archaeological Mission of India and Pakistan, Mortimer Wheeler, pp. 67]
0 Reviews