Read more
আদিবাসীদের পরিচয় এবং সাঁওতাল ভাষার আলোকে সংস্কৃতির সন্ধান
আদিবাসী সংস্কৃতি নিয়ে কিছু বলার আগে এদেব ইতিহাস সম্পর্কে কিছু বলা প্রয়োজন। আদিবাসী, বিশেষ করে অস্ট্রিক্ (সাঁওতাল, মুণ্ডা, হো ইত্যাদি) ভাষাগোষ্ঠীর উপজাতীয় মানুষের ঐতিহাসিক ক্রমসম্প্রসারণ সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানা যায় না। কারো কারো মতে এরা ভারতেরই স্থায়ী বাসিন্দা। কোন কোন পণ্ডিতের মতে ভূমধ্য সাগরীয় অঞ্চ লের মেসোপটেমিয়া কৃষ্ণবর্ণের সুমার জাতির যে মানুষ প্রথম লিপি বিদ্যার আবিষ্কার করে নগর সভ্যতার পত্তন করেছিল, এরা তারই অতি প্রাচীন শাখা। এরা প্রথম প্রস্তর যুগে ভারতে সম্প্রসারিত হয়ে এখানে নিজেদের সংস্কৃতির উন্মেষ ঘটিয়েছিল। কেউ কেউ মনে করেন যে, এরাই সিন্ধু সভ্যতা গড়ে তুলেছিল। উল্লেখ্য যে, দ্রাবিড়িয় উপজাতি কুরুখ ভাষার সঙ্গে এদের ভাষার কিছু সাদৃশ্য দেখা যায়।
পরবর্তী কালে আর্যদের আগমন এবং এদের সঙ্গে দীর্ঘকাল ধরে জাতি-সংঘাত এবং কালক্রমে আর্য-অনার্যদের মিলনে নতুন হিন্দুজাতির সৃষ্টি হয়েছে বলে ঐতিহাসিকদের অভিমত। এরপর থেকেই এরা শাসিত ও শোষিত হয়ে এসেছে। ইতিহাসে শুধু “আদিম অধিবাসী” হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। এর বেশী এদের সম্পর্কে বিশেষ তথ্য পাওয়া যায় না। কিন্তু সাঁওতাল বিধানে এদের অতীতের বহু ঘটনা সংরক্ষিত হয়েছে। এই সাঁওতাল বিধানের (পুরাণে) নিয়মানুসারে জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সাঁওতালদের সমস্ত আচার-অনুষ্ঠানাদির কাজ হয়ে চলেছে। এতে শুধু সাঁওতাল জাতির পুরাণ নয় সমগ্র বিশ্বমানব সংস্কৃতির সংস্কৃতির ইতিহাস এতে সংরক্ষিত হয়েছে।
এদেশে ইংরেজদের আগমনে প্রথমে এরাই ইংরাজদের বিরুদ্ধে বার বার অস্ত্র ধারণ করেছে। ভাগলপুর তিলকা মুর্মুর নেতৃত্বে ইংরাজদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ (১৭৭৬- ৮৪) করার পর থেকে ইতিহাসের আলোকে ক্রমশঃ এদের আত্মপ্রকাশ ঘটতে শুরু করে। উপনিবেশবাদী ইংরেজ এবং দেশীয় জমিদার ও মহাজনদের অকথ্য শোষণ এবং অত্যাচারের ফলে ১৮৫৫ সালে সিদু-কানু-র নেতৃত্বে ইংরাজ এবং মহাজনদের বিতাড়নের উদ্দেশ্যে সাঁওতাল মহাযুদ্ধ ঘোষিত হওয়ায় বিশ্বের সমস্ত উন্নত জাতির মধ্যে এদেশের দুঃসাহসিক সংগ্রামের কথা ছড়িয়ে যায়। কারণ সমগ্র বিশ্বের সমরবিজ্ঞানে পারদর্শী উন্নত জাতিকে ইংরাজরা পরাজিত করে বৃটিশ সিংহ নামে পরিচিত হয়েছিল। আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত সমরবিদ্যায় নিপুণ, এই বৃটিশ বাহিনী সাঁওতাল নামক এক পশ্চাৎপদ উপজাতির কাছে শুধু তীর-ধনুক, টাঙ্গি-বল্লম এবং গাদা বন্দুকের সঙ্গে অসম যুদ্ধে বহু ফ্রন্টে হেরে যাওয়ায় সমগ্র সভ্য জগৎ বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যায়। এরপর হো (কোল), টানা ভগত এবং বিরষা মুণ্ডার বিদ্রোহ আদিবাসীদের গোষ্ঠীগত স্বাতন্ত্রকে প্রকাশ করেছে।
এইসব বিদ্রোহের প্রত্যেকটির পেছনে শোষণের ইতিহাস জড়িত আছে। বর্তমানে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এদেশে শিক্ষা এবং চাকুরীর ক্ষেত্রে দেশের সংবিধানে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার কথা লেখা থাকলেও, বহু ক্ষেত্রেই বাস্তবে তার প্রয়োগ হয় না । কিছু পরিবর্তন হলেও আশানুরূপ আর্থ-সাংস্কৃতিক উন্নয়ন হয়নি। এই শোষণ ও অবিচারের শৃঙ্খল থেকে মুক্তি লাভের জন্য আদিবাসী অধ্যুষিত অঞ্চ লকে নিয়ে স্বতন্ত্র রাজ্য গঠনের দাবীতে দীর্ঘকাল সংগ্রামের পর শুধু বিহারের ছোট অংশ নিয়ে ঝাড়খণ্ড রাজ্য গঠিত হলেও প্রস্তাবিত বহু অঞ্চ ল বাদ পড়ায় এদের সামাজিক এবং অর্থনৈতিক স্বার্থ বিশেষ রক্ষিত হয়নি। ঐ সদ্য গঠিত রাজ্যের শিক্ষা-সংস্কৃতি, ভাষা এবং শিল্পনীতি কি তাও এখনও স্পষ্ট নয়। পশ্চিমবঙ্গ সরকার তড়িঘড়ি পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষৎ হিসাবে ঘোষণা করলেও এর উন্নয়নের ব্লু-প্রিন্ট কি তাও রহস্যাবৃত।
আদিবাসীদের মধ্যে সাঁওতালরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। ভারতে প্রায় এদের জনসংখ্যা এক কোটির মত। তার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গেই এদের জনসংখ্যা ৩০ লাখের মত। এদের মধ্যে শিক্ষা এবং সাক্ষরতার হার তুলনামূলক ভাবে অত্যন্ত কম। শতকরা ৯২ জন মানুষ এখনও দারিদ্র সীমা রেখার নীচে বাস করছে। এখান থেকেই এদের আর্থ-সামাজিক এবং জীবন ধারনের মান কি তা বোঝা যায় ৷
স্বাধীনতার পর থেকেই সাঁওতালী মাতৃভাষায় শিক্ষা প্রচলনের দাবীতে পশ্চিমবঙ্গে আন্দোলন চলছে। শুধু তাই নয়, এই চরম দারিদ্রের মধ্যেও এরা সাহিত্যের চর্চা করে এসেছে। অতীতে এই ভাষার লিপি ছিল না বলে এতে বহু লিপি ব্যবহৃত হয়েছে। কিন্তু এইসব লিপিগুলি সাঁওতাল ভাষাকে সুষ্ঠু ভাবে প্রকাশ করার পক্ষে উপযোগী নয় বলে এর বৈজ্ঞানিক চর্চার (বিশেষ করে শিক্ষা-সাহিত্যে প্রচলন) মাধ্যমে এর লিখন পদ্ধতির মান গড়ে ওঠেনি। তাই বর্তমানে ভাষা সাহিত্যের সংহতির জন্য 'অলচিকি লিপি' বিকাশ লাভ করেছে। এই লিপিকেই পশ্চিমবঙ্গে সাঁওতালী শিক্ষার বাহন হিসাবে প্রচলনের দাবী উঠেছে। শুধু দাবী নয়, এটা হচ্ছে সাঁওতালদের গণদাবী। এছাড়া সাঁওতালী ভাষার সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবীতে তীব্র আন্দোলন সংগঠিত হচ্ছে। এখানে উল্লেখ্য যে পশ্চিমবঙ্গ সরকার সাঁওতালদের দাবীর ভিত্তিতে অলচিকি লিপিকে সাঁওতালী লিপি হিসাবে ১৯৭৯ সালে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং সাঁওতালী ভাষাকে সংবিধানের অষ্টম তপশীলে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য সর্বদলীয় প্রস্তাব বিধান সভায় গ্রহণ করেছে।
সরকারের এই পদক্ষেপ সদর্থক হলেও এর বাস্তবায়ণের দীর্ঘ প্রক্রিয়া মানুষ সন্দেহের চোখে দেখছে। বামফ্রন্ট নেতৃত্বে সাঁওতালী ভাষা কমিটি গঠন করলেও এখানে পুনরায় লিপি সম্পর্কীয় বিতর্ক উত্থাপনের আভাষ পেয়ে মানুষ কমিটি তথা সরকারের উপর আস্থা হারাচ্ছে। অথচ ডঃ পবিত্র সরকার বিরাট ব্যক্তিত্ব এবং দরিদ্র মানুষদের প্রতি সহানুভূতিশীল বলে তাঁর প্রতি আমাদের শ্রদ্ধার অন্ত নেই। এই হচ্ছে অতীত থেকে বর্তমান পর্যন্ত সাঁওতাল আদিবাসীদের অগ্রগতির সংক্ষিপ্ত ইতিহাস। সাঁওতালী ভাষার আলোকে সংস্কৃতির উৎস সন্ধানে—
পণ্ডিতদের মতে আদিম যুগে উপজাতীয় মানুষ সম্পূর্ণভাবে প্রকৃতির অধীন ছিল। তাই প্রকৃতিগতভাবেই তাদের সাংস্কৃতিক জীবন ছিল এক এবং অভিন্ন। আধুনিক বিভিন্ন উন্নত জাতিগুলি বিভিন্ন উপজাতির মিলনে ঐতিহাসিক ক্রমবিকাশ ও বিবর্তনের মধ্য দিয়ে ধ্রুপদী সংস্কৃতির অধিকারী হয়েছে। তাই উপজাতীয় মানুষের সংস্কৃতি ও জীবনধারার সঙ্গে উন্নত জাতির সংস্কৃতির সাদৃশ্য বিশেষ দেখা যায় না। কিন্তু একটু অনুসন্ধান করলে উন্নত জাতির ধর্ম-কর্ম, আচার-অনুষ্ঠান ইত্যাদির মধ্যে প্রাচীন উপজাতীয় সংস্কৃতির স্মারক কোন না কোন ভাবে অবস্থান করছে বলে জানা যায়। এখানে সাঁওতালী ভাষার আলোকে সেই সংস্কৃতির কিছু নির্বাচিত তথ্য বিভিন্ন পুরাণের সাহায্যে সন্ধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।
দেব-দেবীর সৃষ্টি-তত্ত্ব -
সাঁওতাল বিধান (জম্সিম্ বিতি) মতে এদের আদিতম দেবতা হচ্ছে “হুরি” (ঠাকুর)। তিনি প্রচণ্ড ঘূর্ণনশীল ঘূর্ণী (হুর্-হুর্ দ্রুতলয়ের ঘূর্ণন) থেকে সত্বর সৃষ্টি হয়েছিলেন বলে তার নাম ‘হুরি'। এই ঠাকুর জিউ (পরমাত্মা) হুরি ছিলেন স্বর্গের দেবসভার (চাউরিয়া মেলা) সভাপতি। তাঁর বিদিরাণী এবং লুখি নামের দুই পত্নী ছিলেন। বিদিরাণী ছিলেন বয়নশিল্পের অধিষ্ঠাত্রী এবং লুখি ছিলেন কৃষি-শস্যের অধিষ্ঠাত্রী।
এদিকে হিন্দু পুরাণ মতে হিন্দুদের আদি দেবতা হচ্ছেন হরি। ইনি স্বয়ং ঈশ্বর বিষ্ণু নামেও পরিচিত। তিনি স্বয়ম্ভু। তাঁর সৃষ্টি নিয়েও বিরাট তত্ত্ব আছে। লক্ষ্যণীয় যে এই দেবতারও লক্ষ্মী এবং সরস্বতী নামে দুই দেবী বা পত্নী ছিলেন। লক্ষ্মী ধনের অধিষ্ঠাত্রী এবং সরস্বতী হচ্ছেন বিদ্যা ও জ্ঞানের দেবী। এইসব দেবদেবীর নাম এবং কার্যকলাপের মধ্যেও সাদৃশ্য দেখা যায়।
মানবজাতির সৃষ্টির তত্ত্ব—
সাঁওতাল বিধান মতে মানবজাতির আদি পিতা ও মাতা হচ্ছেন পিলচু হাড়াম এবং পিলচু বুটি। এঁরা ছিলেন মিথুনের (হাঁস—হংসীর) পুত্র এবং কন্যা (বড়)। এ সম্পর্কে হিন্দুদর্শনে বহু মত আছে। এখানে আমরা ব্রহ্মা এবং সরস্বতীর সৃষ্টি তত্ত্ব নিয়ে আলোচনা করব। হাড়াম এবং আয়ো সাঁওতালদের এই আদি পিতামাতার নামের সঙ্গে হিন্দুদের প্রজাপতি ব্রহ্মা ও সরস্বতীর নামের কোন সাদৃশ্য নেই। কিন্তু দেবতাগুলির চিত্র-চরিত্র এবং কার্যকলাপ সম্পর্কে চিন্তা করলে এঁদের সাদৃশ্যতার রূপ উন্মোচিত হয়ে যায়। এই দেব-দেবীদের সম্পর্ক হচ্ছে স্বামী-স্ত্রী এবং এঁরা বংশ বিস্তারের জন্যই সৃষ্ট হয়েছেন। পিলচুদ্বয় হংস-মিথুনের পুত্র-কন্যা হওয়ায় এঁরা হংস-হংসীর পিঠে আরোহণ করে স্বর্গে ঘুরেছেন। আর ব্রহ্মা এবং সরস্বতীর মূর্ত্তি আমরা হাঁস ছাড়া কল্পনা করতে পারি না। হংস হচ্ছে ব্রহ্মা এবং সরস্বতীর বাহন। এখানে এদের বাহনকেন্দ্রিক সাদৃশ্যতার দৃষ্টান্ত পাওয়া গেল ।
এখানে লক্ষ্যণীয় যে পুরাণে বিহঙ্গ বাহন হিসাবে নির্বাচিত হয়েছে যে, যারা জল, স্থল এবং আকাশেও বিচরণ করতে পারে। বিহঙ্গকুলের মধ্যে বেশী বংশ বৃদ্ধির প্রবণতা দেখা যায় ৷ এখানেই 'মারাং বুরু'-র সৃষ্টি রহস্য নিহিত।
এখন এই সাধারণ বাহন হাঁস বা হংস শব্দের মর্ম কি হতে পারে তাহাই প্রথমে বিচার বিশ্লেষণ করা উচিত। সাঁওতালী ভাষায় হাঁস শব্দে সাধারণ পক্ষী হংসকে বুঝায়। এছাড়া উক্ত শব্দে আনন্দ এবং পূর্ব রাগও বুঝায় যার মধ্যে প্রাক্-প্রজনন প্রক্রিয়ারই বীজ নিহিত। অন্যপক্ষে, হিন্দু শাস্ত্রের মতে এই ‘হংস’শব্দর মধ্যেই সৃষ্টি তত্ত্বের মহামন্ত্রের বীজ নিহিত। এই হংস শব্দের মধ্যে ‘অহং সঃ’ অর্থাৎ ‘সেই আমি' বলে যে মন্ত্র আছে, তা পরমাত্মা, সেই তৎপুরুষের পুরুষ প্রতীক প্রজনন অঙ্গকেই নির্দেশ করে। এখানে সাঁওতালদের দর্শনে মানুষের বংশ বিস্তারের উৎস এবং এ সম্পর্কে হিন্দু দর্শনের গূঢ় তত্ত্ব ধারণার একই উৎস থেকে নিঃসৃত এবং বিধৃত বলে মনে হয়। সাঁওতালী ‘হাঁসদাঃ’ এবং হিন্দুর ‘কারণ বারি' একই অর্থকে প্রকাশ করে। পাশ্চাত্ত্যের বিভিন্ন জাতি হাঁসকে প্রেমের প্রতীক হিসাবে কেন বিবেচনা করে, মিশরীয় অধিবাসীরা হাঁসকে কেন তাদের পূর্বপুরুষ হিসাবে মনে করে তার ব্যাখ্যাও এখান থেকেই দেওয়া যায়। প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য যে বাইবেল বর্ণিত আদি মানব-মানবী আদম এবং ঈভ্ নামের সঙ্গে সাঁওতালদের আদি মানব-মানবী হাড়াম (Adam) এবং আযো (Eve) শব্দের মধ্যেও সাদৃশ্য দেখা যায়।
বিভিন্ন ভাষায় পিতামাতাবাচক শব্দের উৎস—
সাঁওতালী ভাষায় পিতাবাচক শব্দ হচ্ছে আপা (আপাত্) এবং সংস্কৃতে পিতৃ শব্দটি 'পা' ধাতুর তৃচ্ প্রত্যয় করে নিষ্পন্ন বলে জানা যায়। এখানে সাঁওতালী ‘আ-পা’ এবং সংস্কৃতের এই ‘পা’ ধাতুমূলের সংকেতটি ধারণার একই সূচক ‘পা’-কে নির্দেশ করে বলে মনে হয়। সম্ভবতঃ এ্যাংলো-স্যাক্সন ভাষাগুলির পিতৃবাচক Papa এবং Petor ইত্যাদি একই তথ্যের প্রতিফলন বলে মনে হয়।
সাঁওতালী মা-বাচক 'এগা' (গ) শব্দের অঙ্গবোধ গা শব্দের ছাপ দেখা যায়। কারণ অনুসন্ধানে দেখা গেছে সাঁওতালীতে পিতা (আপা) পায়ের প্রতীকধারী হওয়ায় একই রক্তের পিতার বোন পিসী (হাত্ম) হাতের প্রতীকধারিনী হয়েছে। (বাংলার পিসী শব্দ হাতের পেশী থেকে গৃহীত বলে মনে হয়।) এইভাবে পারিবারিক সম্পর্কসূচক শব্দগুলি মানুষের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের নাম থেকে ভাষায় গৃহীত বলে অনুসন্ধানে জানা যায়।
সাঁওতালী মুণ্ডাদি ভাষাগুলিতে বারের নামগুলি যথাক্রমে সিঙ্গে (রবি), অতে (পৃথিবী) ইত্যাদি। ভারতীয় হিন্দু এবং পাশ্চাত্ত্যের মানুষের বারের হিসাবেও প্রথমে সূর্যকে ধরে তারপর গ্রহ এবং উপগ্রহের নামে নামিত হওয়ার দৃষ্টান্ত দেখা যায়। এই তথ্য থেকে প্রতীয়মান হয় যে বিশ্বের মানব-সংস্কৃতির সৃষ্টি, চিন্তা এবং চেতনার ধারাটি একই উৎস থেকে নিঃসৃত হয়ে বিভিন্ন রূপে যুগ থেকে যুগান্তরে প্রবাহিত হয়ে চলেছে।
0 Reviews