হুলের সূচনা

হুলের সূচনা

Size

Read more

 হুলের সূচনা



মুসলমান রাজত্ব ভারতবর্ষের কৃষি এবং অর্থনৈতিক বুনিয়াদের উপর চরম আঘাত হানে। উৎপন্ন ফসলের বিরাট এক অংশ শাসক শ্রেণীর ব্যয় নির্বাহের জন্য কৃষকদের দিতে হত। বিলাসপ্রিয় মুসলমান নবাব এবং সুলতানগণ ভারতের কৃষি অর্থনৈতিক বুনিয়াদকে জর্জরিত করে ফেলেছিল। ছোটনাগপুর পাহাড় জঙ্গলে বসবাসকারী খেরোয়াল গোষ্ঠীর মানুষেরাও মুসলমান শাসকের হাত থেকে রেহাই পায়নি। মুসলমান আমলেই ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে মুদ্রা ব্যবস্থার প্রচলন শুরু হয়। লেনদেন ক্ষেত্রে আদিবাসী সমাজের চিরাচরিত কাউডি/কাউড়ি (cowree) ব্যবস্থার রূপান্তর ঘটতে থাকে। তৎসত্বেও মুসলমান যুগের ছোটনাগপুরা অঞ্চ লে সামগ্রিক আদিবাসী জীবন ধারা অনেকটাই অক্ষুণ্ণ ছিল — The boundary it will be seen excludes the whole of the Santal Parganas from the south of kahalgaon to the Barakar, Pachet and the territory of the Rajahs of Bishnupur (Bankura). In vain do we look in Santalia for muhammadan names of villages and towns, and though there can be no doubts that the Muhammadan king of Bengal tried to hold parts of the hills by establishing thianah, and appointing jaigir holders, no permanent settlements were formed. One of the Most westerly thanas in southern Santalia was Sarhat, N. W. of Shiwri (sorry) in Birbhum which is mentioned in Tribeni inscriptions. Whilst the Settlement of pathan Jaigirdas, before and after the time of Sher Shah as a standing militia against the inroads of the tribes of Jharkhand (Chutia Nagpur), led to the formation of the great Muhammadan Zamindari of Birbhum which gave the E. I. Company some trouble. (Contribution to the Geography and History of Bengal- H. Blochmann P-15).

১৫৮০ সালে মহারাজ মান সিং ছোটনাগপুর আক্রমণ করেন। সম্রাট ঔরঙ্গজেবের সময়ে রাজধানী রাঁচী থেকে ৪০ মাইল দক্ষিণ পশ্চিম ডুইসা নামক স্থানে স্থানান্তরিত করা হয়। ১৭৬৫ সালে বাদশা শাহ আলম (২) ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানীর অধিকার মেনে নেয়। ফলে ১৭৬৭ সাল থেকে ইংরেজরা অধিক সংখ্যায় ঝাড়খণ্ড এলাকায় প্রবেশ করতে থাকে। এলাকার সমস্ত রাজাদের উপর বর্ধিত হারে রাজস্ব আদায়ের চাপ দিতে থাকে। ঝাড়খণ্ডীদের উপর চলে শোষণ ও অত্যাচার। ১৭৬৫ সালে ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানী দেওয়ানী লাভ করার পর বৃটিশ সৈন্য ধীরে ধীরে মেদিনীপুর জেলাকে কেন্দ্র করে ছোটনাগপুর মালভূমি এলাকায় কর্তৃত্ব করতে সচেষ্ট হয় আদিবাসী এবং দেশীয় জমিদারদের উচ্ছেদ করে। মধ্যবিত্ত বর্ণবাদী ভোগবিলাসী জমিদারদের বসানো শুরু হয়। পাইকান স্বত্ব বিলোপ করা হয়। যার ফলস্বরূপ সংগঠিত হয় ভূমিজ বা চুয়াড় বিদ্রোহ । ইংরেজ ঐতিহাসিক Mill বলেন— When the powers of the political agents were curtailed and the troops of the fortier reduced, the barbavours tribes relapsed into indulgence of their former Propensities. দেওয়ানী লাভের পরের বছর অর্থাৎ ১৭৬৬ সালে ফুলকুসমার ডাকাও সর্দার, জমিদার দামোদর সিং কোম্পানীর আধিপত্যকে সহজে স্বীকার করে নেননি। ১৭৬৭ সালে ফার্গুস রামগড়, লালগড়, জামবনী এবং জাঁটিবনী (বর্তমান শিলদা) জমিদারীকে নিজের কর্তৃত্বে আনার চেষ্টা করেন।

বিস্তীর্ণ অঞ্চ লের জমিদার তালুকদার পাইক সর্দারেরা চুয়াড় বিদ্রোহে অংশ নিয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে দুর্জন সিং - রাইপুরের জমিদার (পরে স্বত্বচ্যুত), যদু সিং - বনড়ীর জমিদার (পরে জমিদারীচ্যুত), নন্দলাল সিংহ - রামগড়ের জমিদার, সুন্দর নারায়ণ সিং - ফুলকুশমার জমিদার, সুন্দর নারায়ণ সিং - শ্যাম সুন্দরপুরের জমিদার, দামোদর ভঞ্জ - ময়ূরভঞ্জের রাজা, বৈদ্যনাথ সিংহ - দাশ পাড়ার জমিদার, সুবলা সিং - কুইলা পালের তালুকদার, মানগোবিন্দ সিং - কুইলা পালের জমিদার, ত্রিভুবন সিং - বরাভূমের জমিদার, বীর সিং - মানভূমের জমিদার, লাল সিং - সাতার খনির জায়গীরদার, জগন্নাথ ধল - ঘাটশীলার জমিদার (পরে স্বত্ব্যচুত্য),রাজা সুন্দর নারায়ণ রায় - কাশী জোড়ার জমিদার, রানী শিরোমনি - মেদিনীপুর জমিদারের আত্মীয় ও রানী শিরোমনির নায়েব রহমৎ খাঁ দিগওয়ার- গোয়ালতোড়ের মুকুন্দম দিগওয়ার ও হারু দিগওয়ার, নয়া বসতের দিগওয়া, বাগদী সর্দার, গোবর্ধন দিকপতির নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

১৭৬৬ সাল থেকে শুরু করে লাগাতার চূড়াড় আন্দোলন চলে ১৮৩২-৩৬ সালের গঙ্গা নারায়ণ হাঙ্গামা পর্যন্ত। ভারতবর্ষে ইংরেজ সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই ভারতবর্ষে ভূমিজ সন্তানেরা (sons of the soil) ইংরেজদের বিরুদ্ধে এবং স্বদেশী তাঁবেদারদের বিরুদ্ধে লাগাতার সংগ্রাম চালিয়েছিল। অপরপক্ষে বর্ণবাদীদের অনেকেই দেশীয় শাসনকে ঈশ্বরের অনন্ত করুনার দান হিসাবে বর্ণনা করেছেন। ভারত পথিক রাজা রামমোহন রায় তাঁর “Appeal to the king in council. লিখেছিলেন— "Divine providence at last, in its abundant mercy, stirred up the English nation to break the yoke of those tyrants (Muslims) and to receive the oppressed Natives of Bengal under its protection!

(The History and culture of the Indian people. Bharatiya Bidya Bhavan part-II Vol-Xps-13.)

১৯৭৯ সালে আগস্টস্ ক্লিভল্যাণ্ড ভাগলপুরের কালেক্টর হয়ে আসার পর তিনি সাঁওতালদের নিয়ন্ত্রনাধীনে আনার চেষ্টা করেছিলেন। মান পাহাড়িয়া মাল মুড়াদের বখশিসের লোভ দেখিয়ে সাঁওতালদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু দুটি গোষ্ঠীর মধ্যে বিভেদ নীতি চালু করেও কোনোরকম ফায়দা তুলতে পারেন নি। ১৭৮৪ সালে তিলকা মাঝির নেতৃত্বে খণ্ডযুদ্ধে স্বয়ং ক্লীব ল্যাণ্ডকেই তিলকার বাঁটুলে প্রাণ হারাতে হয়েছিল।

চুয়াড় বিদ্রোহের ফলশ্রুতি হিসাবে ১৮০৫ সালে বিষ্ণুপুরকে কেন্দ্র করে জঙ্গলমহল জেলা গঠিত হয়। A Regulation (Regulation XVIII of 1805) had been passed, in 1805 by which tracts, called Jungle Mahals, Situated in the Zilas of Birbhum, Burdwan and Midnapur, were detached from the jurisdiction of the Magistrate of those and Zilas and were placed under the Jurisdiction of an officer called the Magistrate of Jungle Mahals... The district Thus formed was composed of 23 Paragans and Mahals of fifteen including pachet were transferred from Birbhum three were transferred from Burdwan Viz. Senpahari. Shergarh and Bishnupur excepting the police circle of Kotulpur and contagious parganas of Balsi which remained under the jurisdiction of the magis trade of Burdwan five were transfered of the from Midnapore Viz. Chhatna, Baikanagar; Simple and briliics (O. melley, B. D. K. Mlley, B. D. G Bankir (Cal) 1905 pp 38)

লান্টকে জঙ্গল মহলের প্রথম ম্যাজিস্টেট করে আনা হয়। কিন্তু ১৯৩২ সালের ভূমিজ বিদ্রোহ এবং ১৮৩১-৩২ সালের কোল বিদ্রোহ জঙ্গল মহলকে অশান্ত করে তোলে।

সারা ছোটনাগপুর মালভূমি তোলপাড় হয়ে উঠে। আগে মোঘল এবং পাঠান সম্রাট ছোট নাগপুরের মালভূমিকে বাংলার প্রবেশদ্বার বা gate way হিসাবে ব্যবহার  করতেন। স্থানীয় আদিবাসী জমিদারদের তাঁরা কোনদিনই উৎখাত করার চেষ্টা করে নি। নাম মাত্র নজরানা নিয়ে সম্রাটদের সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল। কিন্তু ইংরেজ সৃষ্ট জমিদার, কালেক্টর, দারোগা এবং তাঁবেদারদের দৌরাত্ম্যে ছোটনাগপুর মালভূমিতে বিদ্রোহের আগুন জ্বলেছিল— In Chotonagpur which accounted for almost one half of the Bihar, the Mughals hardly even interefered with internal administration as long ever interefered with internd in some ares like Sinhbhum, they failed in imposing even this symbolic measure of subordination. One execption was the great tribal belt in south west Bihar hart of Santhal Parganas. This was the site of Strategic passes considered to be the gateway of Bengal. On this account the region become a battle ground of afgan and Mughals troops. Even here however the Mughls mainly garrisoned the strategic area around Rajmahal and made little attempt to penetrate the inteior.... Company policy required that the interior be opened to trade (in oilsed and other Jungle Products) and administered by its own officials. The company took advantage of feuds among chero chiefs of palaman to install their own Rajas and rent collectors over the Kol population. Similary in Ranchi region. The British exploted disputes between the Raja and his rivals to vest proprity rights in Rajpur and Brahmin Jagirdars family. In Singhbhum, the British Jagirdars previous insited by the Hindused ruling family. In Singhbhum, the British first subduced the Raja and then joined forces with him in subjugating Hos.

Such strategies ofter back fired. The British created Zaminder and their rent collectors and daragds adopted such exploitative policies against the tribal cultivators that many saw no hope other than vevolt. The 1832 rebellion of the kolts joined by the other major tribes in the region launched attacks through out chotonagpur on Hindus, Muhamedans and after foreigners who sellted in tjeir villages.... (The kol) drove them homes and of property. Which were brunt plundered and sacrified number of those who fell into their hand to their excited passions of revenge and hatdred (O. malhy Palaman 1907 : 29)

চুয়াড় অর্থাৎ জংলীদের শায়েস্তা করতে তৈরী করা হয়েছিল জঙ্গল মহল। কিন্তু শায়েস্তা তো দূরের কথা দীর্ঘ আঠাশ বছরেও চুয়াড়দের বাগে আনা যায়নি। জঙ্গল মহল Field force গঠন করা হয়েছিল কিন্তু শান্তি ফেরানো যায় নি। - But it become increasingly difficult for the army to pacify the country. From the reports sent to Brigade Majour of the Jungle Mahals Field Force by Captain Griffin, Captain Bird, Lt. Humpton Lt. Cooper and Captain Johnson the Helplessness of the operation was amply revealed (Prog: Beng Jud (Criminal) No. 23 of 1st Jan 1833)




১৮৩৩ সালে জঙ্গলমহল জেলাকে আবার বিভক্ত করা হলো। গঠন করা হলো South West Fortier Agency. বাদাম পাহাড় থেকে শুরু করে লাখাই সিনি, তেরেল কুটি সীল রাকাপ্ ডোমবারি, আজোধিয়া রায়কা বুরুতে যখন বিদ্রোহের আগুন দাউ দাউ করে জ্বলে তখন রাজমহল বুরুর কোলে দামিন প্রদেশে আর একটা নতুন ইতিহাস শুরু হচ্ছিল। While the jungle Mahals were suffering from various malaies, the most important work of the history if the district of the Santal Parganas had been started. This was the demarcation of Domin-1-Kah as a Gurment Estate, recommeded by Sutherland in 1819 and carried out by ward between the years 1824 and 1833..... The renewed migratory mode of Santals the freqent disterbances in the Jungle Mahal area, the Jamindary oppression over the innocent the simple Santals, The close connecting boundary of the Jungle Mahals and the Damin i-koh area made the settlement of the Santals in the area independent of the will of any individual. (Mepherson, H. Settlement Report - Santhal Pgs. 1910)

১৮৭০ সালের শেষ ভাগ থেকে নতুন করে সাঁওতালরা গ্রাম পত্তন করতে আরম্ভ করে। বীরভূমের জঙ্গল কেটে বসতি স্থাপন করতে থাকে। ঐতিহাসিক রেভাঃ চাইতান হেমব্রম কুমার সান্তাল পারগানা সান্তাল আর পাহাড়িয়া কোওয়াক ইতিহাসে লিখছেন— রাজমহল বুরু দৗখিন সেচ্ বিরভূম আর মানভূমরে দামোদর গাড়া হাবিচ্ পাহাড়িয়া লেকান আদিবাসীয়া (aborginal) সান্তাল হড় আড়ি বছর পীহিল রেগে কো হেচ্ বাসা আকান তাঁহেকানা। ওন কো দ হিন্দু জমিদার আর মাহাজন কোওয়াক কচলন্দ কারণতে অতিঞ অতিজ্ঞতে রাজমহল বুরু ভিড়াও কো হেচ এনা। তারমতে পাহাড়িয়ী কো আতে‍ জমি বাকো গরজাতে সরকার দ ১৭৯০ সাল খন আড়ি কুসিতে সানতালকো বল হচোয়াৎ কোওয়া। সানতাল হড় দ বুরু আড়ে পাসে বারিয়াঁও অতেৎ আর তপ ৈজমিকো জ্ঞাম ব্দেকৎ খান আঁড়ি কুসিতে বির মাক টানডি টীনডিতে বেরেলঃ ক কো এতহপ এনা। অর্থাৎ রাজমহল পাহাড়ের দক্ষিণে বীরভূম এবং মহাজনের অত্যাচার ঘুরতে ঘুরতে রাজমহল পাহাড়ের পাদদেশ পর্যন্ত এসেছিল। পরে পাহাড়িয়ারা জমি পছন্দ না করায় সরকার ১৭৯০ খৃষ্টাব্দে থেকে আনন্দের সঙ্গে সাঁওতালদের প্রবেশ করতে দিল। সাঁওতালেরা পাহাড়ের আশে পাশে উর্বর ও সমতল জমি পেয়ে মহানন্দে বনজঙ্গল কেটে পরিষ্কার করে বসতি স্থাপন করতে লাগল। (অনুবাদ ধীরেন্দ্র নাথ বাসকে)।

১৯৫১ সালের মধ্যে দামিনে সাঁওতালরা ১৪৩৭ গ্রাম পত্তন করেছিল। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে জমি তৈরী করেছিল, সোনার ফসল ফলিয়েছিল। সারাদিন মাঠে মাঠে কাজ করার পর রাতে রূপালী জ্যোৎস্না নামতেই ধামসা মাদলের বোল উঠত, নাচ গানের আসর বসত। তাদের জীবনের গান দীমিনের পাহাড় ডুংরিতে, অরণ্য মায়ের শিরা উপশিরায়া ধ্বনিত হত। ১৩৩০ সালে লোকনাথ দত্ত সাঁওতাল কাহিনী বনবীর গাথায় সাঁওতালদের আবাস ভূমির সুন্দর বর্ণনা দেন—

বিন্ধ্যাচল প্রান্তে

উত্তর ভারতে

ঝাঢ়খণ্ড দেশ,

বঙ্গের সীমান্তে

পঞ্চাশ যোজন,

অর্ধত চন্দ্রকার

উত্তর দক্ষিণে

বিস্তার যাহার

উত্তরে জাহ্নবী

দক্ষিণে সাগর

মধ্যপথে বহে পূত দামোদর

নন্দ ময়ূরাক্ষ অজয় সিলাই

স্বর্ণরো, ব্রাহ্মণী কাঁসাই, নীলগিরি সীমা যাহার অবনী মা'র প্রান্তরেখা পূত বৈতরণী রাজমহলের দীর্ঘ শৈলমালা, পরেশ নাথের অভ্রস্পর্শী শিলা। দুমকার গিরি যার মধ্য মেরু রাঁচী মালভূমি যার জঙ্ঘা উরু সেই গিরিদেশ কানন কান্তার স্বাধীন সাঁওতাল জাতির আগার। (১০৬)

খেরওয়াল জাতির জীবন জীবিকা তাঁর কাব্য গ্রন্থে বাঙ্ময় হয়ে উঠেছে। বনকুমারী বনের রানী আমার ক'টা সই ফুলের মাঝে ফুলের সাজে ফুলের রাণী হই; ভোমরা সনে কমলে বনে, কমল মধু খাই

বিজন বলে সমীর সনে

মনৌষধি আপন মনে

খুঁজবে কভু যাই

কাননে বেড়াই

গিরির স্রোতে

পাহাড় পরে,

নদীর তীরে

সাঁতারে খেলাই গো মেষ চরাই

ময়ূর সনে

নেচে চলি

বাঁশীর সনে গাই।

ঝরনা পাতে

সাঁওতালদের সুখ-সমৃদ্ধি দেখে বীরভূম, মুর্শিদাবাদ বর্ধমান থেকে দিকু ভণ্ডের দল এবং সাহাবাদ ছাপরা বেতিয়া আরা প্রভৃতি জায়গা থেকে ভোজপুরিয়া, ভাটিয়া দালালদের আমদানি দেখা দিল। সাঁওতাল গ্রামের পাশে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে অর্জিত জমি পণ্যে পরিণত হয় এবং জমিদারি প্রথাও সুদৃঢ় হয়। ইংরেজ সরকার জমিদারদের কাছ থেকে কর আদায় করত। জমিদাররা চাষিদের উপর ইচ্ছামত কর খাজনা আদায় করত। জমি হস্তান্তর করত। জমিদারদের চাটুকার হিসাবে মহাজনরা কাজ করত। সাঁওতালরা লেখাপড়া জানত না। মহাজনরা ঋণ নিয়ে চক্রবৃদ্ধির হারে সুদ নিত। ঋণের জ্বালায় সাঁওতালদের গরু বাছুর জমি জায়গা সব মহাজনদের হস্তগত হতো। সাঁওতাল সামাজিক মানসিকতায় বাড়ী শুধু থাকার ঠাঁই নয় গৃহদেবতা এবং পূর্ব পুরুষদের আলয়। জমি শুধু জৈবিক আধার নয়, বংশ পরম্পরায় আত্মীক বন্ধন। ১৯৪৫ সালে Man in India-র Vol. XXV সংখ্যায় সাঁওতাল বিদ্রোহ সম্পর্কে W. J. Culshans এবং W. G. Archer লিখেছিলেন— “Nomotive is so strong in a tribal people as the preservation of the life of the tribe and its mores albeit the motive works for the most part of the unconcious level. And a santal's land not Inly provide economic Security, but is a powerful link with his accestors; and this applies to newly entered areas no less than the old. For the will not take possession till the spirits approve. The land is a part of a his spiritual as well as his economic haritage. Hunger drove them despair but their attachment to the land provided also an emotional basis without which the rebeltion might not have taken place. আমরা পরের ইতিহাসেও দেখি— ১৮৮৯-৯০ সালে হারানো জমি ফিরে পাবার জন্য দীর্ঘকাল ব্যাপী লড়াইয়ের নামই 'সর্দার লড়াই”।


জমির সাথে আত্মীক সম্পর্ক শুধু একা সাঁওতালদের নয়। তাদের বৃহত্তর গোষ্ঠী কোল গোষ্ঠীরও ছিল। যারা এককালে একই সমাজে বর্তমান ছিল। The kol has strong heriditory attachment to the village were his forefather first settled. and where his ancestral bying place is situated. He thinks that, as he has an undouted right to be buried there... He has also right to get land there (Bengal Gan. Mse. Progs, Oct 1880).

সাঁওতালদের যেটুকু জমি ছিল সেটাকে তারা ঠিক মত সময়ে চাষ আবাদ করতে পারত না। চাষের সময় নিজেদের লাঙ্গল নিয়ে যেতে হতো বেসার প্রথায় নীল চাষ করতে। ছটরায় দেশ মাঝির কথায় নীল চাষের কান্নাঝরা সুদীর্ঘ বর্ণনা আছে।

ইতিমধ্যে লুপ রেললাইন বসানোর কাজ আরম্ভ হয়েছে তিন পাহাড়, সাহেবগঞ্জ, ভাগলপুর প্রভৃতি জায়গায়। রেলের ফিরিঙ্গী সাহেবদের দৌরাত্ম্য বেড়ে গিয়েছিল। সাঁওতালদের রেলে কাজ দেওয়ার অজুহাতে জোর করে তাদের মুরগী, ছাগল ধরে আনত। মেয়েদের ইজ্জত হানির সুযোগ খুঁজত। রেল বসানোর জন্য প্রচুর বনজঙ্গল ধ্বংস করা হয়েছিল। সাঁওতালরা বন জঙ্গল থেকে যে সব ফলমূল পেত তাও নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল। ফলে সাঁওতালদের দারিদ্রের সীমা ছিল না। সাঁওতালদের উপর শোষণ অত্যাচার চরমে উঠেছিল। যদিও দামিন দেশে জঙ্গল মহলের থেকেও অনেক কম হারে জমিতে খাজনা দিতে হতো।

"The fact remains then that the Santals of Domin-I-Koh paid much less rent then their country parts in the Nineteenth Century (Vide Appendix iv) Even in the 50s the main grievances of the Santals of Domin-I-Koh here not the rise of rents but the prevalence falshhood, the negligence of the Sahibs, The extortions of the Mahajans, the Corruption of the Amlas and the appression of the police. (O'Mally L.S.S.B.D.G Santal Parganas (cal) 1910 p.-46)

তখনও থানা, মহেশ দারোগার মতো দারোগা, প্রশাসন সবই ছিল কিন্তু সবই জমিদার এবং মহাজনদের হাতের পুতুল। কোর্ট কাছারিতে সাঁওতালরা সুবিচার পেত না। সাঁওতালদের প্রচলিত আইন সরকারের কাছে গ্রাহ্য হতো না। যে সমস্ত জমিদার এবং মহাজনরা অমানুষিক অত্যাচার চালায় তাদের শাস্তি হয় না, যারা বিচার চায় শাস্তি হয় তাদের। ভাগলপুরে জেলবন্দী এক বৃদ্ধ সাঁওতাল ক্ষোভের সঙ্গে বলেছিল —— হে ভগবান, তুমি অনেক উপরে চলে গেছ, নইলে পাপীদের শাস্তি অবশ্যই দিতে।'

যুগ-যুগান্তরের অত্যাচার, অবিচার শোষণই বিদ্রোহের সৃষ্টি করেছিল। রেগড়া টামাকে (ধামসায়) বোল উঠেছিল — হুলের। সাঁওতালদের গ্রামের প্রধান মাঝি, পরগনার প্রধান পারগানা, দেশের প্রধান দেশ মাঝি সবাই মিলে পথ খুঁজছিল অত্যাচার, অবিচার ও শোষণ থেকে মুক্তির। সাঁওতালদের সাথে যোগ দিয়েছিল কামার, কুমোর, মোমিন ও গোয়ালা প্রভৃতি জাতের লোকেরা, তারা সাঁওতালদের মতোই সমান অত্যাচারিত, নির্যাতিত। সিধু, কানুহুর নেতৃত্বে 'হুল' আন্দোলনই ভারতবর্ষে প্রথম বিদ্রোহ যেখানে জাত-ধর্ম নির্বিশেষে অত্যাচারিত শ্রেণীর মানুষ শোষণ ও মুক্তির পথের সন্ধান নিয়েছিল।

.... yet the class consciousness of the rebels becomes evident in the high level of inter, Tribal co-operation achieved among various Santal sub groups and a delibrate decsion not to attack the non-tribal poor. British officialdom. already begining to review Indian society. Through the rigid distorting prion of tribe and caste wrote in tems of exempted costs. But it required no more than an elementary exercise in deconstruction of the language the colonialism to see that in the Santal Hool. Even more so than in the Kol insurrcetion that preceeded and the Ulgulan (1899) of Birsa Munda which followed it class solidarity triumphed over ethnicity This however was a consciouness of class which sprong from and was distilled out of the bodnds of community in the alterd economic and political context of the latter half of the nineteenth century. Peasant resistance of the non tribal area would being to forge class indentities that emarged from newly re-inforced individual rather than pre-exisiting communitdarism rights (Present Labour and Colonial Capital Rural Bengal 1770 Sugata Bose p-152).

সাঁওতালদের বাহিনী তৈরী হয়েছিল শুধুমাত্র তীর-ধুনক, টাঙ্গি-বল্লম সম্বল করে। তারা জানত ইংরেজদের ফৌজ আছে পুলিশ আছে আর আছে কামান বন্দুক প্রভৃতি আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র। তবু তারা আত্ম বলিদানের জন্য প্রস্তুত হয়েছিল। সুপ্রকাশ রায় লিখেছেন ‘বাহিনীর সৈন্যরা ইংরেজদের কামান বন্দুকের সাথে লড়বার জন্য হাতে নিল ধনুক আর বিষাক্ত তীর, কুঠার, তরবার আর সামান্য কয়েকটি বন্দুক। বিদ্রোহের নেতারা মনে করলেন ইহাই যথেষ্ট। বিদ্রোহের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হইল শত্রুর প্রতি ঘৃণা, দৃঢ়তা ও সংগঠন। সেদিক থেকে সাঁওতালদের শক্তি ইংরেজদের থেকে অনেক বেশী।

'হুল' থেকে জন্ম নেয় নেতৃত্ব। সিদো, কানহুর আবির্ভাবও হয়েছিল এভাবেই। সিদো কানহুর আহ্বানে সমগ্র সাঁওতাল তথা নির্যাতিত, নিপীড়িত জাতি সত্তার মানুষ সাড়া দিয়েছিল। ১৮৫৫ সালের ৩০শে জুন ভগনাডিহির শালকুঞ্জে দশ হাজার জনতা শপথ নিয়েছিল অত্যাচার অবিচার এবং শোষণের অবসান ঘটিয়ে স্বাধীন এবং শোষণ মুক্ত সমাজ গড়ার জন্য।


0 Reviews