সাধু রামচাঁদ মুরমু

সাধু রামচাঁদ মুরমু

Size

Read more

 সাধু রামচাঁদ মুরমু






শতবর্ষ আগে লেখাপড়া না জানার ফলে খেরওয়াল জনগোষ্ঠীর লোকগুলি ছিল অতি সাদাসিদে উদার আর গরীব। জ্ঞানের আলো কোথায় পাবে? ওদের উন্মেষের দিসারী কে হবে? সমাজের লোকগুলো হেলাফেলা খিদের জ্বালায় ওরা ঝালাপালা আর নেশা খেয়ে মাতাল হয়ে অনাদিবাসী মেলা উৎসবে পাববনে অশালীন নাচ করার যুগেই ছিল তখন। ভয়াল ব্রিটিশ শাসকের অত্যাচার-অবিচার-শোষণ শাসনের কড়া আইন লঙ্ঘন করার অধিকার ছিল না কারোর। জনসাধারণকে সজাগ করার জন্য ইংরাজ সাহেবদের অন্যায় অত্যাচার রুখবার জন্য সাঁওতালী ভাষা ও সমাজ উন্নয়ন পরিকল্পে রামচাঁদ উদয় হয়েছিলেন মহামানব রূপে শুভ ১৬ই বৈশাখে সেই ১৩০৫ সালে।

বড় হয়ে ভরা যৌবনে গুরু দীনবন্ধু মাণ্ডির আহ্বানে অনুপ্রাণিত হয়ে যিনি ব্রিটিশের বিরুদ্ধে সংগঠন করেছিলেন, যিনি সংগঠন করেছিলেন মেদিনীপুর জেলা আদিবাসী মহাসভার, যার উৎপন্ন ছিল ১৯২৮ সালের পরে পরে সে সময় যাঁর উদাত্ত আবেগ আহ্বান ছিল “দেবন তেঁগোন আদিবাসী বীরদ” উঠে দাঁড়াও আদিবাসী বীরগণ। সাঁওতাল সংস্কৃতির নাচগান সামাজিক কাজের নিয়ম নীতি বাঁচিয়ে রাখার জন্য লিখে গেছেন। (১) সারি ধরম সেরেঞ (২) অলদহ অনড়হেঁ (৩) লিটী গোড়েৎ (জমসিম বিন্তী) (৪) সংসার ফেন্দ নাটক (৫) সারি ধরম (৬) ঈশরড়।

প্রাণীতত্ত্ব বিকাশের আগে এই পৃথিবীটা কেমন ছিল? তাঁর চিন্তাধারায় যেটা ধরা পড়েছে সেটাই লিখে রেখে গেছেন। খেরওয়াল গোষ্ঠীর সাঁওতাল জনগণ দৈনন্দিন নাচগান আসরের আখড়ায় (১) দং (২) লাঁগড়ে (৩) ঝিকা (৪) শিকারিয়া (৫) লুহুরী খেমটা (৬) লুতুর চাপো (৭) রাঁবড়ারিৎ (৮) ঝিঙা ফুলিয়া (৯) বাহা (১০) কারাম (১১) পাতা ইত্যাদির বাজনা ও গানগুলির সু-ললিত সুর নিখুঁৎ ভাবে খুঁজে পাওয়া যায় সাধু রামচন্দ্র মুরমু এর লেখায়।

আমার প্রথম পরিচয় ১৯৪২-৪৩ সালে। তখন আমার বয়স-৬ (ছয়) বছর মত। সত্য সনাতন ধর্ম্ম অবলম্বনে লেখা তাঁর “সারিধরম সেরেঞ” গানের গায়ক হিসাবে। আমার গ্রাম ঝটিয়াড়া (ডাকঘর বেলপাহাড়ী, জেলা মেদিনীপুর) প্রায়ই যেতেন। গান শেখানোর আখড়া তৈরী করেছিলেন। রাত্রিবেলা গানের আসর বসতো। বাজনার তালে তালে নাচের আসরের আখড়ায় গান গেয়ে শেখানোই সাঁওতালী সংস্কৃতিতে পদ্ধতিগত প্রথা। সাধু রামচাঁদ মুরমু শুধু লেখক নন—গীতিকাব, সুরকার ও ভাল গায়কও ছিলেন। 

তাঁর লেখা সমস্ত গানের নিজস্ব বহু বিচিত্র সুর বেঁধে দিয়ে গেছেন। তাঁর দেওয়া সুর পরিবর্তন করা বা বিকৃত করা অন্যায় ও ঘোরতর অপরাধ বলে মনে করি। মাদল ও বাঁশী বাজানো নিখুঁতভাবে জানতেন। এটা আমি দেখেছি। তখন বয়সে ছোট হলেও তাকে নাচগান পরিচালনা করতে দেখেছি। পরে বয়স বাড়ার সাথে সাথে তাঁর বহুমুখী প্রতিভার পরিচয় পেয়েছি। সুমধুর ও সুমিষ্ট গানের প্রভাবে তাঁর শিষ্যত্ব নেওয়ার অনুপ্রেরণা অন্তরে অনুভব করেছি। পরে পরে অধিকাংশ গানের সুর জেনে নেওয়ার সুযোগ পেয়েছি।

সাধু রামচাঁদ মুরমু আর আমার বাবা শ্রীনাথ সরেন এর বয়স ছিল সমান সমান। বাবার পাঠশালার গুরু দীনবন্ধু মাণ্ডি মহাশয় (গ্রাম-সাহাড়ী, ডাকঘর-শিলদা) রামচাঁদকে প্রথমে আমাদের গ্রামে নিয়ে গিয়েছিলেন। সেটা ছিল বাংলা ১৩৪৭ সালের ২৪শে বৈশাখ। বাবার কাছ থেকেই এটা শুনেছি। আমার অগ্রজ শ্রীপূর্ণচন্দ্র সরেন হচ্ছেন সাধু রামচাদের প্রিয় শিষ্য। উনি এখনও জীবিত, কবি কণ্ঠের সঙ্গে গলার সুর মিলিয়ে দাদা গান শিখেছেন। সনাতন ধর্ম বা “সারিধরম সেরেঞ” গানগুলি সমস্তই ঋতুভিত্তিক। বিভিন্ন সময় ভিন্ন ভিন্ন উৎসব উপলক্ষ্যে যথোপযুক্ত গান গাওয়া সাঁওতালী সংস্কৃতি।

যেমন

..... শারদীয়া সময়-

কালী পূজা উপলক্ষ্যে, কাৰ্ত্তিক-অগ্রহায়ণ মাস ......দোল পূর্ণিমা উপলক্ষ্যে

(১) দাঁসায়

(২) সহবায়. সহবায়.........

(৩) বাহা বাহা........

(৪) হেড়হেৎ. হেড়হে...............ধান রোওয়ার পর চারা নিড়ানো উপলক্ষ্যে

(৫) জেলেঞ ডাহার......অস্থি বিসর্জন উপলক্ষ্যে 

(৬) কারাম.....

(9) ................করম পূজা উপলক্ষ্যে মূলত বিয়ে বাড়ীর গান।

বিবাহ উপলক্ষ্যে দং ছাড়া অন্য সুরের গান গাওয়া নিষেধ। লাঁগড়ে ও পাতা যে কোন ঋতুতে গাওয়া যায়। তবে, উপযুক্ত আখড়ায় ইহা বেশী মানান সই।

আরও বহু গান লিখে গেছেন। আধ্যাত্মিক ভাব ধারায় লেখা গান একটা এখানে তুলে ধরছি –চাঁদো-বাঙ্গা-

আলেহ আম হপন গেচং 

ওহোহো ওহায় হয়ে হয়ে। 

আলেই আমহপন গেচং।



১। খেলোনড্ লাগিৎ নওয়া মঞ্চ – 

জানামেনক মানমি গেচং 

আমাঃ হালে নওয়া শিরজন 

অডে গেতাম দায়া চং।

২। জমা এয়াঃ লড়া দুরিব

সানামাঃ তে আলে গুরীবে 

বানুর তালে আকিল দিশা— 

আম ঞুতুম হইচং—

৩। সানাম তেলে নিষ্কি নেনা—

কাই রেলে কুচা আকানা —

পাপতে জিউয়ে আতারেনা 

এনই বানুঃ হুঁসে—গেচং—।

নেহর তালে আজম মেসে—

সেরমা—শাকা জাড়ি মেসে

আলেরেনাঃ শাসেৎ সেঙ্গেল— 

ইরচি ছঁড়িচ আম গেচং। 

৫। দুক জ্বালা জিউয়ে লাঙ্গা

সহদঃ মে চাঁদো বঙ্গা আলে জাতি তরাও মেসে

আমাঃ দায়া তেগে চং।

৬। বঙ্গা বুরু ত্রুতুম দনেহাউ 

পারাংগৎ ডাহার চিনহাউ

কীই ক ইকা বানুঃ দিসা

এমালেম সে আম গেচং।

তর্জমা

ভগবান, আমরা তোমারই সৃষ্টির সন্তান

ওহো হো, হায় হায় ।

আমরা তোমারই সৃষ্টির সন্তান।

(গানের প্রতিটা স্তবকের শেষে এটা পুনরায় গাওয়া হয়)

১। এই পৃথিবীটা সুন্দব করে সাজানোর জন্যই মানুষ জন্ম নিল। তোমার এই সৃষ্টির মহিমা সত্যই অতি সুন্দর। এটা তোমার দয়ারই দান।

২। জীবন যাপন উপযোগী প্রাত্যহিক খাদ্য ও পানীয় যোগানে আমরা সবদিক দিয়ে গরীব ও বোকা তোমার স্মরণে ডাক দেওয়ার জ্ঞান আমাদের আদৌ নেই।

৩। সব দিক থেকে নিষ্পেষিত। অনেক অপরাধে নিমজ্জিত। পাপে প্রাণ প্রজ্বলিত। তবুও আমরা বেঁহুঁসে ডুবে আছি।

81 ভগবান আমাদের আবেদনটুকু শোন। স্বর্গ থেকে শীতল বারিধারা বর্ষণ কর। আমাদের “শাসেৎ সেঙ্গেল” পাপ-দগ্ধ জ্বালাময়ী আগুনে জল ছিটিয়ে দেওয়ার মালিক তুমি ৷

৫। দুঃখের-জ্বালা-ক্লান্তিকর-প্রাণে সহানুভূতি দান আমাদের জাতি তোমার মহিমায় উন্নত হউক।

৬। দেব-দেবী উপাসনায় পরিত্রাণ পথ খোঁজার বাসনায় সব অন্যায় অপরাধ ক্ষমা চাওয়ার দিসারী তুমি। তুমিই আমাদের উপযুক্ত জ্ঞান দাও।

এরকম আর একটি গান এখানে তুলে ধরলাম। এর বিষয়বস্তু বর্তমানে এই কলিযুগ —

১। আবন বিদাল পাড়াওএনা কুলিযুগ

সানাম গেচং হারকেৎ শাসেৎ জিউয়ে ঠুগ,

তাওয়াঃ তারকো—হড়ম হাসো সেঁগেঁৎ সেঁগেৎ

২। সিঙ্গে ঞিদা তারেন পেরেচ্ 

আঁরেড়ে দ হালে হালুক বিছক

 জ্বালা জহড় দ হিজুঃ সেনঃ 

বোগে বাড়িচ কাথা চেঁগেৎ 

৩। কড়াম আরুবঃ মেঁদাঃদ হিজরাঃ— 

স্বরগ পাতাল মনে জিউয়ি—

গুজরাঃ সারতি গেচ বানুঃ 

কতিঞ ও হো হো হায় ! 

অকয়—ঠেনিঞ ইদিতিঞা খবর গে

হহ জংতে আলাং হচ অবর গে

বানুঃ কুতিঞ দিসা ভরসা উদুগেম সহয়ে।



৫। সেরমাঞ কয়গ সেরমা 

আড়ি চট্‌গে অতেঞ চেটাক 

অত মাত কেটেচ গে উইহার 

রাকার উইহার আঁড়গো লেলেগৎ।

৬। নওয়া ধারতি পাপ তেগে পেরেচ এন

চাদো সেবা মানাও বাতাও বানুঃ আন

কাইতে আঁধা ধুদ মেরে বানুঃ মারসাল বেগেৎ।

৭। জিউয়ি ইদি অকারে দুঞ চালাঃ আ?

বোগে ঠাওরে চিকা কাতেঞ চালাঃ আ?

ওহায় হায় হায় ইঞরে মনে সেওয়েন গেলেজঃ।

৮। রাস্কা আজমঃ সেরমা রেনাঃ সুকদ

এণ্ডে চাবাঃ হড়ম রেনাঃ দুক দ

ইদি আগু তেগে মনের কাথা ঝত হলেজঃ।

৯। মারাং বুরু হিজুঃ মেসে সাঁওরে

বাসা ঘেঁহো ইঞাঃ মনে ঠাওরে-

চাঁদো বাবাঠেন নেইর কদ গেমের কাতিক্রমে।

১০। স্বরগ নরক গটা গেদম কোকোল

উর্দুঃ আঞমে ইঞদ চাঁদো বাখোল

দাহে নাইরে দুলাড় ঠাওরে—ডেরা ইমাঞ মে-

তর্জমা

১। বর্তমান আমাদের এ সময় কলিযুগ চলছে, 

নানান্ দুঃখ কষ্টে আমরা জর্জরিত 

ক্লান্তিকর ব্যথা বেদনায় দেহ ও প্রাণ বিচলিত।

২। সংসারের জোওয়াল (Yoke) দিনরাত বয়ে চলেছি, 

নিত্য-নৈমিত্তিক দুঃখ দুর্দশা লেগেই আছে 

তারেই মাঝে ভাল মন্দ কথা অন্তরে উকি মারে।

৩। বুক বেয়ে অশ্রু ঝরে, বিগলিত 

প্রাণ স্বর্গ ও পাতাল খোঁজে হায় হায় ! 

অন্তরে পরিতৃপ্তি দেবার কেউ নেই।

৪। আমার এ দুঃখের খবর কাকে জানাবো ? 

ডাক দিতে পাচ্ছি না, জিভ জড় হয়ে যাচ্ছে, 

অসাড় আচ্ছন্ন হচ্ছে। 

ভরসা দেওয়ার দিসারী কে হবে? 

কোথায় পাব সে সাহায্য, সহায় আর সাহস ?

৫। চোখ মেলে দেখি অসীম আকাশ অনেক উঁচুতে, 

হাতে ভূতলে আঘাত মারতে 

গিয়ে অনুভব করি মাটি ভীষণ শক্ত—

আকাশ পাতাল কল্পনায় কোনও খেই খুঁজে পাই না।

৬। এই পৃথিবীটা এখন পাপে পরিপূর্ণ

ভগবৎ সেবা ধৰ্ম্ম মেনে চলার দিন 

আর নেই অপরাধের আঁধারে 

ভালোর দিকটা ঢাকা পড়ে গেছে

৭। এই প্রাণটা বিদায় দিতে আমি কোথায় যাব ?

ভাল জায়গার বাসস্থান কোথায় পাব ? 

হায়! হায়! মন প্রাণ এখন ভীষণ বিচলিত,

৮। শুনেছি স্বর্গে নাকি অনেক সুখ

সেখানে শারীরিক ও মানসিক দুঃখ দূর হয়। 

কল্পনার অনুমানে মনের কথা 

সব ভুলে যাই সেখানে যাব কি করে ?

১। “মারাং বুরু' সৃষ্টি কর্তা—কাছে এস, 

আমাকে সঙ্গে নাও আমার অন্তরে বাসা বাঁধ। 

“চাঁদো বাবা” পিতা পরমেশ্বরের কাছে 

আমার সব প্রার্থনা পৌঁছে দাও।

১০। তুমি সর্বময় কর্তা, স্বর্গ ও নরক 

সব জায়গায় পাঠাও আমাকে দেখিয়ে দাও 

“চাঁদো বাখোল” ভগবৎ প্রাসাদ দোই-এর সাগরে 

প্রীতি ও প্রেমে আমাকে ডুবে থাকতে দাও।

 (আমাকে বলে দাও সেই জায়গাটা কোথায় ? যেখানে গেল আমি শান্তি পাব)

সাধু রামচাঁদ মুরমু এক দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। বাবা মোহন মুরমু ওরফে ‘টুডু' ও মা কুনি মুরমু-এর আর্থিক অবস্থা মোটেই ভাল ছিল না। অভাবের তাড়নায় লেখাপড়া বেশী শিখতে পারেন নি। তখনকার মধ্যে বাংলা ষষ্ঠ শ্রেণী পৰ্য্যন্ত পড়াশুনা করেছিলেন। ঐ পরিমাণ শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়েই সাঁওতালী ভাষা ও সাহিত্য উন্নয়ন কাজে নেমেছিলেন। জীবিত অবস্থায় কোনও পাণ্ডুলিপি বই-এর আকারে ছাপাতে পারেন নাই। তাঁর মৃত্যুর কয়েক বছর পরে অর্থাৎ ১৯৬০ দশকের প্রথম দিকে কোলকাতার সরকারী কাজে কর্মরত আমার জ্যেঠতুতো ভাই শ্রীযুবরাজ সরেন “সারি ধরম সেরেঞ” পাণ্ডুলিপিখানি ছাপাবার প্রচেষ্টা নেন। অনেকের সম্মিলিত উদ্যোগে ঐ পাণ্ডুলিপিখানি ২ (দুই) খণ্ডে প্রকাশ করা হয়। তারপর আমার পরামর্শ ও প্রস্তাব অনুযায়ী শারদীয়া আদিবাসী জগৎ 

"সাধু রামচন্দ্র উইহার বাথান” নাম দিয়ে একটা সংগঠন তৈয়ারী করা হয়। ঐ সংগঠনের মাধ্যমে পরবর্তী পাণ্ডুলিপি উদ্ধার করার প্রয়াস নেওয়া হয়। 'সংসার ফেদ" নাটকখানি একটা পাতায় নকল করে রেখেছিলাম। মাননীয় ডঃ সুহাদ কুমার ভৌমিক মহাশয় ১৯৭০ দশকের মাঝামাঝি সময় তার প্রেস থেকে বই-এর আকারে প্রকাশ করেন। তারই দু-এক বছর আগে আমাদের সংগঠনের পক্ষে “অলদহ অনড়াহ” নামের কবিতা বইখানি প্রকাশ করি। সাধু রামচাদ মুরমু-এর পুরানো খাতাগুলি থেকে সেগুলি সংগ্রহ করেছিলেনম। “লিটা গড়েৎ” জমসিম বিস্তী-এর পাণ্ডুলিপিখানি অনেক জায়গায় কাটাকাটি ও ছেঁড়া অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল। “সেটাই ১৯৭১ সালে "সাধু রামচা উইহার বাধান" সংগঠন থেকে ১ম (প্রথম খণ্ড) খণ্ড প্রকাশ করা হয়। বইটার দ্বিতীয় খণ্ডের পাণ্ডুলিপি পাওয়া যায় নাই। ১৯৫৪ সালে সাধু রামচাঁদ মুরমু মারা যাবার পর অনেক আত্মীয় স্বজন বন্ধুবান্ধব মূল্যবান পাণ্ডুলিপির খাতাগুলি প্রকাশ করার নাম করে নিয়েছিল। পরবর্তীকালে পাণ্ডুলিপিগুলি কেউ ফেরৎ দেন নাই বা প্রকাশ করেন নাই। হারিয়ে যাওয়া পাণ্ডুলিপির সঠিক সংখ্যা জানা যায় নাই। সারা জীবন ধরে লিখেছিলেন। হয়ত অনেক ছিল।

১৯৯৫ সালে ঝাড়গ্রাম শহরে “সাধু রামচাদ মুরমু মেমোরিয়াল ট্রাস্ট” নাম দিয়ে আর একটি সংগঠন তৈরী হয়েছে। আরও ১০খানি কবিতা সংগ্রহ করে ১৯৯৬ সালে “অলদহ অনড়হে ”-এর দ্বিতীয় সংস্করণ ও “ঈশরড়” ঈশ্বর তোর নামক বইখানি প্রকাশ করা হয়েছে। ৩৭৩ পৃষ্ঠার একখানি বড় বাঁধানো খাতায় তারই আবিষ্কৃত 'মজ দাদের আক' (মহেঞ্জোদাড়ো) অক্ষর দিয়ে ঈশ্বরড় পাণ্ডুলিপিখানি লেখা আছে। প্রত্নতাত্ত্বিকদের খননে হরপ্পায় পাওয়া অক্ষরগুলির সাথে অধিকাংশ মিল দেখতে পাওয়া যায়। পাণ্ডুলিপিখানি বাংলা অক্ষরে রূপান্তর করে ঈশ্বরড়' প্রকাশিত হয়েছে।

সাঁওতালী ভাষা অতি প্রাচীন। বহু যুগ ধরে মৌখিক ভাবেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে। মূল কারণ, সাঁওতাল সম্প্রদায় লেখা-পড়া জানত না। তাই তাদের সংস্কৃতির পুরাণ তত্ত্বগুলি মুখে মুখে বিস্তি বাঁখেড়ের মাধ্যমেই চির বিদ্যমান ছিল বা এখনও আছে। সাধু রামচাঁদ মুরমু ঐগুলি লিখিত আকারে ধরে রাখার বা বই-এর আকারে প্রকাশ করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু খুব দুঃখের বিষয় কোন বই ছাপিয়ে প্রকাশ করিতে পারেন নাই। সাঁওতালী ভাষা ও সাহিত্যে তাঁর অবদান অনেক এটা বোধহয় নিঃসন্দেহে বলা যায়। তাঁর প্রকৃত প্রতিভার মূল্যায়ন হবে কি হবে না, এবার এরকম প্রশ্ন আসতে শুরু করেছে। গুরুদেব সাধু রামচাঁদ মুরমু-এর সংস্পর্শে এসেছিলাম ছেলেবেলায় সেই ১৯৪০ দশকের মাঝামাঝি সময়ে। আমাদের গ্রামে এসে বাবা, কাকা আর দাদাদের গান  শেখাতেন। গলার সুর কেমন ছিল, সেটা বলে প্রকাশ করা যায় না। আমার মত আরও অনেক ছেলেমেয়ে ঐ আসরে যেতাম। “দুক কাহিনী রীড়” গান আমার মত ছোটদের শেখাতেন। এভাবে দীর্ঘ প্রায় ১০ বছর তাঁর সংস্পর্শে থেকে গান শিখেছি।

তারপর সেই অশুভ শোকের দিন এল। সে ১৬ই ডিসেম্বর-১৯৫৪ গুরুদেব আমাদের ছেড়ে স্বর্গে চলে গেলেন। আমরা অনাথ হয়ে গেলাম। আমার বয়স তখন ১৬ বছর, স্কুল জীবনই শেষ হয়নি। গুরুদেবের অকাল প্রয়াণে সাঁওতালী সাহিত্যের অনেক ক্ষতি হল।

কোলকাতা জাদুঘরের বাংলা মিউজিয়াম বিল্ডিং-এ যে অনাবিকৃত বর্ণমালা (Script) রাখা আছে, তার সঙ্গে 'মর্জ দান্দের আঁক' বর্ণমালার অনেক মিল দেখতে পাওয়া যায়। তাঁর লেখা থেকে জানা যায় যে ইংরাজী ১৮-১২-১১৫০ তারিখ কোলকাতা গিয়ে মিউজিয়মের ঐ অক্ষরগুলি পড়ার চেষ্টা করেছিলেন। অক্ষরগুলি এলোমেলো অবস্থায় আছে। সেগুলি ঠিক ঠিক জায়গায় বসাতে পারলে পাঠোদ্ধার করা সম্ভব হতে পারে বলে মন্তব্য করেছিলেন। সাধু রামচাদ ঐ মন্তব্য করে গেলেও ঐ অক্ষর পাঠোদ্ধার বিষয়ে কেউ গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজন অনুভব করেনি। আমি এক নগণ্য লোক, তবুও আন্তরিক বিশ্বাস রাখি কোন দিন কোন অক্ষর বিশারদ গভীর জ্ঞানীগুণি লোক যদি "মজ দাদের—আঁক"-এর সহযোগিতায় মিউজিয়ামের অক্ষরগুলি পাঠোদ্ধারের চেষ্টা চালান, তাহলে অদূর ভবিষ্যতে ঐ অক্ষর ও বিভিন্ন জায়গার শিলালিপিগুলির পাঠোদ্ধার হলেও হতে পারে। ইজ দান্দের —আঁক এখনও অবহেলিত অবস্থায় পড়ে আছে।

বিংশ শতাব্দীতে মানুষ অনেক অগ্রগতির দিকে এগিয়ে গেছে। জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রভাবে অনেক দুর্ভেদ্য জায়গা জয় করছে। যেমন—(১) ১৯৫৩ সালে হিমালয়ের চূড়া মাউন্ট এভারেস্ট মানুষের জয়ের পতাকা উড়ানো (২) ১৯৬৯ চাঁদের মাটিতে মানুষের পায়ের ছাপ। পরবর্তী এই একবিংশ শতাব্দীতে হয়ত এরূপ আরও নূতন আবিষ্কার হবে। মানুষ আশাবাদী। কোলকাতা মিউজিয়াম সংগৃহীত অক্ষর এখনও কেউ পড়তে পারে নাই বা উদ্ধারের কাজে সফল হয় নাই, এটাও একটা আশ্চর্য্যজনক ইতিহাস। অদূর ভবিষ্যতের কথা কে বলতে পারে? কোন দিন পাঠোদ্ধার হলে সেটা হবে উল্লেখযোগ্য ঐতিহাসিক ঘটনা। ঐ অনাবিষ্কৃত অক্ষর কোন্ সম্প্রদায় মানুষের? এই প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক।

সাধু রামচাঁদ মুরমু-এর আবিষ্কৃত ঐ 'মজ দান্দের আঁক' দেখে ঝাড়গ্রাম মহকুমার তদানীন্তন মহকুমা শাসক মাননীয় শ্রী কে. পি. এ. মেনন (আই. এ. এস.) সাহেব অত্যন্ত আনন্দিত হয়েছিলেন। ঐ অক্ষর প্রসার বা প্রচার সম্পর্কে মহকুমা শাসক কি কি 


পরামর্শ দিয়েছিলেন, তাহা জানা যায়নি। তবে, সাধু রামচাঁদ মুরমু যাতে তার লেখার কাজ ভালভাবে চালিয়ে যেতে পারেন, তার জন্য কাগজ ও অনেক বড় বড় খাতা (চামড়ায় বাঁধানো) দিয়েছিলেন। ঐ খাতাগুলির একটিতে “মজ দান্দের আঁক” অক্ষর দিয়ে “ঈশরড়” পাণ্ডুলিপিখানি লিখে রেখে গেছেন। প্রদর্শনী হিসাবে সেটা এখনও তাঁর বাড়ীতে রাখা আছে। বাদবাকী বাংলা অক্ষরে লেখা কোন পাণ্ডুলিপি পাওয়া যাচ্ছে না।

ভারত স্বাধীন হওয়ার পরে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল ডঃ কৈলাসনাথ কাটজু মহাশয় কোন এক উল্লেখযোগ্য ঘটনা বা কারণ উপলক্ষ্যে সাধু রামচাদের গ্রাম কামারবাঁদি (ডাকঘর-শিলদা, থানা-বিনপুর, জেলা-মেদিনীপুর) গিয়েছিলেন। খুব সম্ভবতঃ সেটা ১৯৪৮-৪৯ সাল। সঠিক তারিখ জানা নেই। সেই সময় সাধু রামচাঁদ মুরমু স্বরচিত গান “দুলাড়িয়া পেড়া সাহেব” এই গান গেয়ে অতিথি মাননীয় রাজ্যপাল সাহেবকে অভ্যর্থনা জানিয়েছিলেন। সে গানখানি এখানে তুলে ধরলাম।

দারাম—দাঃ—দাঁসায়—রীড়

১। দুলাড়িয়া পেড়া সাহেব—এগো বাবা জহার জহার মনে রেয়াড় জিউয়ি সাগেন জাঙ্গা ধুড়ি কোদর কাতে নণ্ডেম কটা কেৎ।

সেরমা রাজাঃ মান্দ্রাতে—ধারতি রেপে মারাং আকানা মাহামাহিম জেলেঞ জিউয়ি—ঞাম কাতে মারাং আকা তাঁহেন তাবন পে।

সোতোঃ সুমুং জিউয়ি তালে—আলে লেলহা সাড়ি নিসার্ভি মেনাং লেয়া আপে রেনাঃ উমুল রেগে

দায়া কাতে মান্দ্রা আলেপে।

৪। জমাঃ এ-আঃ বানুঃ তালে—চেতে তেলে আতাং মেয়া হো মনে সুতাম জিউয়ি গালাং বাহা মালা আঁজলে কাতে আতাং তালে মেঁ—। - ভাবানুবাদ

১। হে প্ৰিয় অতিথি, শ্রদ্ধা ভরা নমস্কার নিও

শুভ শীতল মনপ্রাণে তোমার পদধূলি এখানে দিলে এটা তোমার পবিত্র প্রেমেরই প্রতীক।

২। ভগবানের দেওয়া দানে এ ধরণীতে মহান হয়ে আছে মহা-মহিমময় দীর্ঘায়ু প্রাণ নিয়ে

আরও অতি মহান হয়ে বেঁচে থাক।

৩। আমরা অতি গরীব, অতি দীন, অতি অবোধ

ক্ষুদ্র মন ও প্রাণ নিয়েই তোমার মত মহান মানুষের ছত্র ছায়ায় বেঁচে আছি।

৪। ভাল খাদ্য ও পানীয় আমাদের নেই

কি দিয়ে আপ্যায়ণ করবো ?

সরল অন্তরের সুতো দিয়ে গাঁথা মালাখানি দিলাম দয়া করে প্রীতি ভরে গ্রহণ কর।

অনুষ্ঠান শেষে আর একটি গান গেয়ে অতিথিকে বিদায় সম্ভাষণ দেওয়া হয়েছিল। সেটা বিদায় সেরেঞ—

১। লেলহা নিসার্ভি নিজুরাগে ঞেলতে

হেঁচ লেনাম পেড়া সাহেব আমাঃ দায়াতে।

২। সিবিল সড়ম রেয়াড় কাথাম আগুলেৎ

আলে রেনাঃ মনে জিউয়ি ঝতম তিরপিৎকেৎ

৩। সানাম মনে সানাম জিউয়িম বোরকে‍ আৎ চেপেল চেপেল হড়ম ফারকাঃ রাস্কাম ও ফেলাৎ ৪। আডিদায়া মেনাঃ তামা আলেরে

হারকেৎ তেহম হমর হমর আলে জ্বালারে 

৫। মুখান বেনাঃ তাম আলে মনে জিউয়িরে— সিঙ্গে ঞিদী এেল মেরে আলে সামাংরে—

৬। উইহার লেখান আম রেনাঃ দায়াদ- জিউয়ি তালারে মেৎ দাঃ গে ঝারি ঝারাঃ দ।

- তর্জমা

১। মুর্খ বোকা নিষ্পেষিত নিপীড়িত মানুষের দুঃখ দর্শনে তুমি এসেছিলে, হে অতিথি, হে মনের দরদি।

২। তোমার সুমধুর সুমিষ্ট সম্ভাষণ, আমাদের প্রাণের ক্ষুধা তৃষ্ণা ক্ষণিকের তরে সব দূর করে দিলে। 


৩। সকলের মনে ও প্রাণে আনন্দের জোয়ার ভাসিয়ে দিলে শরীরে রোমাঞ্চ কর উদ্বেল আবেগ এনে দিলে।

৪। আমাদের লাগি তোমার অনেক দয়া অন্তরের উদ্বেলিত প্রাণের জ্বালা গুমরে গুমরে প্রকাশ হতে লক্ষ্য করেছি।

৫। আমাদের অন্তঃকরণে তোমার মুখমণ্ডলের প্রতিচ্ছবি চির বিদ্যমান রইলো। দিন রাত স্মৃতিতে তুমি আমাদের সন্মুখে উপস্থিত।

৬। তোমার দয়ায় কথা স্মরণে এলে আপনা হতেই আনন্দাশ্রু ঝরে পড়ে—যেন বেসামাল বারিধারা ।

৭। আমরা অতি গরীব, অতি নগন্য আমাদের সঙ্গে তোমার প্রীতি বন্ধন ছিন্ন করোনা এই বিনীত আবেদনখানি নিও।

সাধু রামচাঁদ নিজের জীবনীতে এক জায়গায় লিখে গেছেন, “এরা উরু ইঞ রেনদ আড়িগেক ধেরা” পারিবারিক সংখ্যা তার অনেক। দুই বিয়ে, প্রথম ও দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী এবং ছেলেমেয়ের সমষ্টি নিয়ে ঘর সংসারের কথা বলতে চেয়েছেন।” তপলেনা পাপতে ইঞাঃ জিউয়ি রাট পাট” মন ও প্রাণ পাপে জড়িয়ে পড়ল। দ্বিতীয় স্ত্রী আসার পর সংসারের অশান্তি তাকে আচ্ছন্ন করলো। প্রথমা স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক দিন দিন খারাপ হতে লাগলো। সেই সময় পাপ থেকে পরিত্রাণ পাবার আশায় ঈশ্বর আরাধনায় মনোনিবেশ করেন। সাধুবেশের পোষাক পরা আরম্ভ করেন। সাদা ধুতি লুঙ্গির মত পরতে লাগলেন। মাথার চুল, দাড়ি, হাত পায়ের নখ কাটা বন্ধ করলেন। মাথায় সাদা কাপড়ের পাগড়ী। নিরামিষ খাওয়া-দাওয়া। শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা সব ঋতুতে প্রতিদিন ভোরে স্নান করতেন। শুনেছি, স্নানের সময় পুকুরে অনেকক্ষণ জলে ডুব দিয়ে থাকতেন। দীর্ঘদিন না খেয়ে বা অল্প অল্প নিরামিষ খাবার খেতে লাগলেন। এভাবে ক্রমশঃ শরীর ভাঙতে লাগলো। আরাম করে কোনও বিছানায় শুতেন না। নিজের গায়ের পরা কাপড়ের কিছু অংশ মাটিতে বিছিয়ে ঘুমাতেন। (আজাঃ হরঃ লুগড়ি রেনাঃ আঞ্চার আটেৎ কাতে ইকড়ম কাডেয় জাপিদা) এইভাবে আধ্যাত্মিক ভাবধারায় জীবন যাপন করতে গেলে গ্রামের পাড়া-প্রতিবেশীরা তাকে সাধুবাবাজীর মত দেখতে লাগল। তৎকালীন মহকুমা শাসক শ্রী কে. পি. মেনন (I. A. S) ও রাজ্যপাল ডঃ কৈলাসনাথ কাটজু, তাঁর কথাবার্তা, চাল-চলন ও পোষাক পরিচ্ছদ দেখে তাঁকে সাধুপুরুষ বলে মেনে নিয়েছিলেন। এইভাবে রামচাঁদ মুরমু 'সাধু রামচাঁদ মুরমু' নামে পরিচিত হতে লাগলেন। সাঁওতালী সাহিত্য সাধনায় তাঁর লেখার অবদান ছিল অসীম। অধিকাংশ লেখা কাব্য আকারে প্রকাশ হওয়ায় মহাকবি হিসাবে এখন চিহ্নিত হয়ে গেছেন। বাংলা, হিন্দি, ইংরাজী ও অন্যান্য ভারতীয় ভাষায় তাঁর লেখা অনুবাদ হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করি। এই কাজে সাধু রামচাঁদ সাহিত্য অনুরাগী লোকদের এগিয়ে আসতে হবে। তা না হলে অন্যান্য ভাষাভাষী সাহিত্যিক ও জনসাধারণের কাছে তাঁর লেখা বা সাহিত্য প্রতিভার কথা অ-জানা থেকে যাবে। বাংলা সাহিত্যের মহান কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর- এর লেখা ‘গীতাঞ্জলি’ ইংরাজী ভাষায় অনুবাদ হওয়ার পর পৃথিবীর অন্যান্য দেশের লোক তাঁর প্রকৃত সাহিত্য প্রতিভার পরিচয় জানতে পেরেছিলেন। বিশ্বকবি হিসাবে খ্যাতি অর্জনের মুখ্য ভূমিকা ছিল ইংরাজী ও ভারতীয় তথা পৃথিবীর অন্যান্য দেশের ভাষায় তাঁর লেখার অনুবাদ।

মহামান্য পশ্চিমবঙ্গ সরকার কবির বাস্তুভিটা কামাররাদি গ্রামে গত ১৬ই বৈশাখ ১৪০৩, ইংরাজী ২৯শে এপ্রিল ১৯৯৬ সাল সাধু রামচাঁদ মুরমু জন্মশতবর্ষ উদযাপন উপলক্ষ্যে শতবর্ষ ফলক স্থাপন ও শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেছেন। পরবর্তী বছর ১৯৯৭ ঐ স্থানে কবির ব্রোঞ্জ মূর্ত্তি স্থাপন এবং তাঁর রচনাবলী সমন্বয়ে “সাধু রামচাঁদ অনল মালা” নামে একখানি বই প্রকাশ করেছেন। তারপর প্রতি বছর জন্মতিথি উৎসব সরকারীভাবে সেখানে হয়ে আসছে। তৎসহ গল্প, প্রবন্ধ ও কবিতা লেখা প্রতিযোগিতার অয়োজন হয়ে আসছে। নির্বাচিত প্রতিযোগীগণ সরকারীভাবে পুরস্কৃত হয়ে আসছেন।

গত মার্চ ৩০-৩১-২০০০ সাঁওতালী বিভাগ বিদ্যাভবন বিশ্বভারতী শান্তিনিকেতন- এর ব্যবস্থা পরিচালনায় দুই দিন ব্যাপী সাধু রামচাঁদ মুরমু জন্ম-শতবর্ষ উদযাপন অনুষ্ঠান হয়েছিল। মাননীয় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শ্রীবাবুলাল মারাণ্ডি প্রদীপ জ্বেলে মূল অনুষ্ঠানটির উদ্বোধন করেছিলেন। আমি নিমন্ত্রিত অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলাম। আমার গুরুবাবা সাধু রামচাঁদ মুরমুকে গুরুদেব বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-এর আশ্রম বিশ্বভারতী শান্তিনিকেতনে পৌঁছে দিতে পেরেছি, তার জন্য আমি আনন্দিত নিজেকে ধন্য মনে করছি।






See-video 





0 Reviews